
গঙ্গা-পদ্মা পানি বণ্টন চুক্তি পর্যালোচনা এবং আন্তঃসীমান্ত নদীগুলোর বিষয়ে আলোচনা করতে ভারতের কলকাতায় পৌঁছেছে বাংলাদেশের ১১ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। পাঁচ দিনের এই সফরের অংশ হিসেবে সোমবার (৩ মার্চ) তারা পশ্চিমবঙ্গের ফারাক্কা ব্যারেজ পরিদর্শন করবেন এবং এরপর ৭ মার্চ কলকাতায় আনুষ্ঠানিক বৈঠকে অংশ নেবেন।
ফারাক্কা ব্যারেজ পরিদর্শন ও যৌথ পর্যবেক্ষণ
বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ভারতের কেন্দ্রীয় পানিশক্তি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাও থাকবেন। ফারাক্কা ব্যারেজের পানিপ্রবাহ পর্যবেক্ষণ করে তারা দেখবেন, চুক্তি অনুযায়ী গঙ্গা থেকে কীভাবে পানি পদ্মায় প্রবাহিত হচ্ছে। নদীর পানি বণ্টনে ফারাক্কা ব্যারেজের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায়, এই পর্যবেক্ষণ সফর দুই দেশের জন্যই তাৎপর্যপূর্ণ।
৭ মার্চ কলকাতায় আনুষ্ঠানিক বৈঠক সফরের মূল অংশ হিসেবে ৭ মার্চ কলকাতার একটি বিলাসবহুল হোটেলে বাংলাদেশ ও ভারতের প্রতিনিধি দলের মধ্যে আনুষ্ঠানিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এতে গঙ্গা-পদ্মা পানি বণ্টন ছাড়াও তিস্তা ও অন্যান্য আন্তঃসীমান্ত নদীর বিষয়ে আলোচনা হতে পারে বলে জানা গেছে। বিশেষ করে তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি, যা দীর্ঘদিন ধরে অনিষ্পন্ন রয়েছে, সেটি নিয়েও আলোচনা হতে পারে।
গঙ্গা চুক্তির মেয়াদ শেষের পথে ১৯৯৬ সালে স্বাক্ষরিত গঙ্গা-পদ্মা পানিবণ্টন চুক্তির মেয়াদ ২০২৬ সালে শেষ হবে। ফলে চুক্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে দুই দেশকেই নতুন করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ৩০ বছর মেয়াদি এই চুক্তি অনুযায়ী, শুষ্ক মৌসুমে ফারাক্কা ব্যারেজ থেকে গঙ্গার পানি নির্দিষ্ট হারে বাংলাদেশে প্রবাহিত হওয়ার কথা। তবে বাংলাদেশ বরাবরই অভিযোগ করে আসছে যে, শুষ্ক মৌসুমে পর্যাপ্ত পানি পাওয়া যায় না।
ভারত বরাবরই এই অভিযোগ নাকচ করে বলছে, স্বাভাবিক প্রবাহ ওঠানামার কারণেই এমনটি ঘটে। এবারের বৈঠকে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও কূটনৈতিক সম্পর্কগত বছরের আগস্টে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ভারত বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্কে টানাপোড়েন দেখা দেয়।
বিশেষ করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর এই সম্পর্ক আরও জটিল হয়। তাই চলমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই বৈঠককে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা নদীর পানি বণ্টন নিয়ে নানা বিতর্ক ও আলোচনা থাকলেও, এ বৈঠকের মাধ্যমে দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতার নতুন পথ তৈরি হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।