তানজিমুল উম্মাহ মাদ্রাসায় চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীকে ভয়াবহ নির্যাতন প্রশাসনের গাফিলতি

তানজিমুল উম্মাহ মাদ্রাসার মিরপুর শাখায় চতুর্থ শ্রেণির এক শিক্ষার্থী, নয় বছর বয়সী জমজম ইসলাম রিতুল, ভয়াবহ শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে। মাদ্রাসার অষ্টম শ্রেণির চারজন শিক্ষার্থী তাকে সামান্য বিষয় নিয়ে নির্মমভাবে নির্যাতন করে।

এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে ৪ মার্চ ২০২৫, রাত ৮টার দিকে। অভিযুক্ত সিনিয়র শিক্ষার্থীরা জোরপূর্বক জমজমকে তার কক্ষ (সপ্তম তলা) থেকে টেনে হিঁচড়ে পঞ্চম তলায় তাদের কক্ষে নিয়ে যায়। সেখানে দরজা বন্ধ করে স্টিলের স্কেল ও প্লাস্টিকের ঝাড়ু দিয়ে প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে তার ওপর অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়।

নির্যাতনের সময়, যখন তাকে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামানো হচ্ছিল, তখন সে এক শিক্ষকের কাছে সাহায্যের জন্য কাঁদতে কাঁদতে আকুতি জানায়। কিন্তু সেই শিক্ষক বিষয়টি সম্পূর্ণ উপেক্ষা করেন, যার ফলে নির্যাতন অব্যাহত থাকে।

৫ মার্চ সকাল ১০টার মধ্যেই মাদ্রাসার সুপারভাইজিং শিক্ষকরা ঘটনাটি জেনে যান। কিন্তু চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়ে তারা কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে বরং বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন। জমজমের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলেও তাকে হাসপাতালে নেওয়ার পরিবর্তে শুধু একটি ব্যথানাশক ওষুধ দিয়ে তার কক্ষে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

এখানেই শেষ নয়, প্রশাসনের আরও ভয়ঙ্কর পদক্ষেপ ছিল ঘটনাটি পরিবারের কাছে লুকিয়ে রাখা। ৫ মার্চ সন্ধ্যা ৬:৩০টার দিকে তারা জমজমকে বাধ্য করে পরিবারের সঙ্গে ফোনে কথা বলতে এবং বলতে বলে যে সে ওই সপ্তাহে বাসায় যাবে না, কারণ তার একটি প্রতিযোগিতা আছে। পরিবারের কেউ তখন কিছু বুঝতে পারেননি এবং বিষয়টি স্বাভাবিক মনে করেন।

তবে জমজম হাল ছাড়েনি। চরম ভয় ও শারীরিক যন্ত্রণা সত্ত্বেও সে তার ভাইয়ের ফোন নম্বর এক বন্ধুর কাছে গোপনে দিয়ে দেয়। সেই বন্ধু রাত ৯:৩০টার দিকে এক শিক্ষকের ফোন ব্যবহার করে তার ভাইয়ের কাছে কল করে দ্রুত মাদ্রাসায় আসার অনুরোধ জানায়। ফোন পেয়ে তার ভাই কোনো কিছু বুঝতে না পারলেও দেরি না করে সঙ্গে সঙ্গে মাদ্রাসায় ছুটে যান এবং সেখানে গিয়ে জমজমকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় পান।

পুরো ২৫ ঘণ্টা—৪ মার্চ রাত ৮টা থেকে ৫ মার্চ রাত ৯:৩০টা পর্যন্ত—মাদ্রাসা প্রশাসন ঘটনাটি চেপে রেখে পরিবারের কাছে কোনো খবর দেয়নি। জমজমের ভাই এসে তাকে উদ্ধার করার পরেই পরিবারের সদস্যরা চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে পারেন। পরদিন সকালে পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়।

৬ মার্চ, পরিবার মাদ্রাসায় গিয়ে সিসিটিভি ফুটেজ দেখতে ও ঘটনার ব্যাখ্যা চাইতে গেলে আরও একবার প্রশাসনের চরম উদাসীনতা প্রকাশ পায়। মাদ্রাসার চেয়ারম্যান ও শাখার পরিচালক ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে তাদের সঙ্গে দেখা করতে অস্বীকৃতি জানান। এই অমানবিক ঘটনার পরও তারা যথাযথ পদক্ষেপ না নেওয়ায় প্রশাসনের দায়িত্বহীনতা আরও প্রকট হয়ে ওঠে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *