মিয়ানমারে সশস্ত্র যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে রোহিঙ্গারা

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে নির্মম গণহত্যা ও বর্বর নির্যাতনের শিকার হয়ে ২০১৭ সালে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। বর্তমানে তারা কক্সবাজারের শরণার্থী ক্যাম্পে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তবে নিজ মাতৃভূমি পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে রোহিঙ্গাদের একটি অংশ সশস্ত্র যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট।

২৫ বছর বয়সী মোহাম্মদ আয়াস (ছদ্মনাম) নামের এক রোহিঙ্গা যুবক সংবাদমাধ্যমটিকে জানান, তাদের লক্ষ্য মিয়ানমারের জান্তা বাহিনী ও অন্যান্য সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোকে প্রতিহত করে নিজেদের ভূমি পুনরুদ্ধার করা। দীর্ঘদিন ধরে এই প্রস্তুতি চললেও ২০২১ সালে গৃহযুদ্ধ শুরুর পর তা আরও ত্বরান্বিত হয়।

২০১৭ সালে সেনাবাহিনীর হাতে বাবাকে হারানো আয়াস বলেন, “আমি আমার জনগণের জন্য মরতে প্রস্তুত। নিজের মাতৃভূমি ফিরে পেতে আমরা লড়াই চালিয়ে যাব।” তিনি জানান, শত শত যুবক তার মতোই এই যুদ্ধের জন্য প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।

রোহিঙ্গাদের প্রশিক্ষণ মূলত মিয়ানমারের গভীর জঙ্গলে অনুষ্ঠিত হয়। দিনের শুরুতে শারীরিক কসরতের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ শুরু হয়। এরপর অস্ত্র পরিচালনা, মার্শাল আর্ট, নজরদারি, তথ্য সংগ্রহ এবং কৌশলগত পরিকল্পনার ওপর আলাদা গ্রুপে ভাগ করে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এভাবে তারা নিজেদের সশস্ত্র আন্দোলন গোপন রাখতে সক্ষম হচ্ছে।

এক ছদ্মনামধারী কমান্ডার জানান, কক্সবাজার ক্যাম্পের হাজার হাজার যুবক স্ব-ইচ্ছায় সশস্ত্র গোষ্ঠীতে যোগ দিচ্ছেন। যারা মিয়ানমারে গিয়ে কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাস ধরে প্রশিক্ষণ নেন এবং পরে ক্যাম্পে ফিরে স্বাভাবিক জীবনযাপন করেন।

রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে জাতিগত নিধনের অভিযোগ রয়েছে বৌদ্ধ সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে। ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এ গোষ্ঠীর লক্ষ্য রাখাইনের স্বায়ত্তশাসিত বৃহৎ রাজ্য প্রতিষ্ঠা করা। রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এবং আরাকান আর্মি উভয়ের বিরুদ্ধেই লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

কমান্ডারদের মতে, তরুণদের মধ্যে লড়াইয়ে অংশ নেওয়ার প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। বিশেষ করে ১৮ থেকে ২০ বছর বয়সী তরুণদের টার্গেট করা হচ্ছে যারা শারীরিক ও মানসিকভাবে শক্তিশালী। কেউ চাইলে স্বেচ্ছায় এই দলে যোগ দিচ্ছেন, তবে কখনো কখনো জোরপূর্বক দলভুক্ত করার অভিযোগও রয়েছে।

রোহিঙ্গা যুবকদের মতে, শান্তিপূর্ণভাবে সমস্যার সমাধান না হলে সশস্ত্র লড়াইই শেষ বিকল্প। এক জ্যেষ্ঠ কমান্ডার জানান, “আমাদের মূল লক্ষ্য শান্তি প্রতিষ্ঠা। তবে কেউ আমাদের পথের বাধা হলে আমরা লড়াই করব। আমাদের মাতৃভূমি আমাদেরই।”

মানবাধিকার সংস্থা ফর্টিফাই রাইটসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত প্রায় দুই হাজার রোহিঙ্গা সশস্ত্র দলে যোগ দিয়েছেন। অর্থ সহায়তা কমে যাওয়ায় এবং ক্যাম্পের কঠিন পরিস্থিতির কারণে আরও অনেকেই এই পথে পা বাড়াচ্ছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও এ বিষয়ে তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, রোহিঙ্গাদের সমস্যা দীর্ঘায়িত হলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করতে পারে।

নিজেদের অধিকার পুনরুদ্ধারে রোহিঙ্গাদের এই সশস্ত্র প্রস্তুতি পরিস্থিতিকে আরও অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে সমাধানের পথ খোঁজা।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *